নহর-এ-জুবাইদা (نهر زبيدة) এক মহীয়সী নারীর ইতিহাস, যা হজের খেদমতের চিরন্তন নিদর্শন:
ইসলামের ইতিহাসে অনেক নারীর অবদান অনন্য ও চিরস্মরণীয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আব্বাসীয় রাজকুমারী জুবাইদা বিনতে জাফর, যিনি তৃষ্ণার্ত হাজীদের পানির ব্যবস্থা করতে গিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নহর-এ-জুবাইদা (Nahr Zubaida) শুধুমাত্র একটি পানির খাল নয় — বরং এটি এক মহিয়সী নারীর ঈমান, দয়াশীলতা ও ওয়াকফের জীবন্ত নিদর্শন।
ইতিহাসের পাতায় ফিরে দেখা: কে ছিলেন রাজকুমারী জুবাইদা?
জুবাইদা বিনতে জাফর ছিলেন খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী। ৮ম শতাব্দীর শেষ দিকে তিনি উপলব্ধি করেন- মক্কা ও আরাফা অঞ্চলে হাজীদের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নেই। তিনি এটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন: “আল্লাহর কোনো মেহমান যেন পানির কষ্টে না ভোগে।” এই বিশ্বাস থেকেই তিনি যে পদক্ষেপ নিলেন, তা আজও ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময়।
নহর-এ-জুবাইদার নির্মাণ: এক প্রকৌশল বিস্ময়!
খৃষ্টীয় ৮০৯ সালে (হিজরি ১৯৩) জুবাইদা খালটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এই খালটি তাইফ অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা থেকে আরাফা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, পুরো খালের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩০ কিলোমিটার, যদিও প্রকল্পটি বিস্তৃত ছিল প্রায় ৯৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। নির্মাণে অন্তর্ভুক্ত ছিল: ১৩২টি গভীর খননকৃত কূপ (খারজ), বিভিন্ন বাঁধ ও জলাধার, কৌশলগতভাবে তৈরি ফিলিং স্টেশন, শক্তিশালী প্রাচীর ও ড্রেনেজ সিস্টেম। এই খাল হাজীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। এটি সে সময়কার অন্যতম ব্যয়বহুল ও জটিল প্রকৌশল প্রকল্প ছিল- যার ব্যয় রাজকুমারী জুবাইদা নিজের সম্পদ বিক্রি করে বহন করেছিলেন।
আপনি হজে গেলে আজও দেখতে পাবেন এই ইতিহাস। যখন আপনি হজে গিয়ে আরাফার ময়দানে দাঁড়াবেন, তখন আপনার চোখে পড়বে একটি পুরোনো খাল বা নালা। সেটিই হচ্ছে নহর-এ-জুবাইদা। যদিও এখন এর অনেক অংশ বন্ধ হয়ে গেছে, তবুও এর অবশিষ্টাংশ আজও গর্বের প্রতীক।
ওয়াকফ, খেদমত ও নারীদের অবদান, নহর-এ-জুবাইদা প্রমাণ করে:
একজন নারীর খালিস নিয়ত কত দূর যেতে পারে। দীনী কাজ শুধু পুরুষের দায়িত্ব নয়, বরং নারীরাও ইসলামের বড় খেদমত করতে পারেন। একটি খাঁটি ওয়াকফ কর্ম হাজার বছর ধরে চলতে পারে। এই খাল এখন শুধু একটি পানির স্রোত নয়, বরং এটি জুবাইদার খিদমতের জ্যোতি।
As-Sunnah Travels — হজ ও উমরাহর খেদমতে নিবেদিত
আমরা বিশ্বাস করি, হজ শুধুই একটি সফর নয়, বরং এটি একটি আমানত। হাজীদের দুঃখ-কষ্ট বোঝা, প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, ইবাদতের সহীহ পদ্ধতি শেখানো — এসবই আমাদের দায়িত্ব। যেমন জুবাইদা করেছিলেন ১২০০ বছর আগে — আমরাও চাই সেই খেদমতের ধারাবাহিকতায় কাজ করে যেতে।
যোগাযোগ : +88 01711-962946
ভিজিট করুন: www.assunnahtravels.com
ফেসবুক লিংক: www.facebook.com/Assunnahtravelsbd
ইউটিউব চ্যানেল: www.youtube.com/@assunnahtravels/
লেখক: শফিকুল ইসলাম
(হজ যাত্রীদের খেদমতে নিবেদিত একজন কর্মী)